মেহেদির অজানা ভূবনে!

0
3060

এবারঈদ উপলক্ষ্যে মেহেদীর ব্যবসায় নেমেছি। এরআগে বিজ্ঞাপন নির্ভরকোন পণ্যের ব্যবসাকরেনি।টিভি বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি মাইটিভিতে রমজান মাসব্যাপি ‘আলফামেহেদী শো’ নামেএকটি অনুষ্ঠান শুরুকরেছি।সেমতে তথ্য সংগ্রহের নিমিত্তে এলেখা।মেহেদী সম্পর্কে যাদেরআগ্রহ রয়েছে তারাহয়তো উপকৃত হবেন। সংগৃহীত তথ্যঅধিকাংশই নেট থেকেনেয়া।আমি শুধু শতাধিকসাইট থেকে তথ্যনিয়ে আমার মতকরে সম্পাদনা করেনিয়েছি।যেহেতু ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার জন্যতৈরী তাই টাইমফ্রেমের দিকে তাকিয়েঅতিরিক্ত কাঁচি চালাতেহয়েছে বলে সুপাঠ্য নাওহতে পারে; তবেমেহেদীর ব্যাপকতা আপনাকেবিস্মিত করবে নিঃসন্দেহে।

০১.মেহেদীর ইতিহাস :
সারা পৃথিবী জুড়েখুঁজে পাওয়া নানানফসিল ও প্রত্নতাত্বিক গবেষণার মাধ্যমে নৃবিজ্ঞানিরা নিশ্চিত হয়েছেনপ্রায় ১৫০০০ বছরধরে নর-নারীরাপ্রকৃতির নানান উপাদানদিয়ে অঙ্গসজ্জ্বা করতেন।সুই ফুটিয়ে শরীরেস্থায়ীভাবে অলংকরণ করাযাকে আমরা ট্যাটুবলি সেটি করাহতো মূলত দুটিকারণে একটি হচ্ছেঅঙ্গসজ্জ্বা আরেকটি হচ্ছেতার আইডেনটিফিকেশন।

সভ্যতার ইতিহাস ধরাহয় ৫০০০ বছর।কিন্তু মেহেদির ইতহাসতারও পুরনো। নিওলিথিক বানব্যপ্রস্তর যুগ (১০০০০-৪০০০ খ্রী.পূ.) থেকেমেহেদির প্রথম ব্যবহার দেখাযায় উত্তর আফ্রিকা ওমধ্যপ্রাচ্যেরমরু অঞ্চলে। প্রায়৯০০০ বছর আগেমরুবাসীরা প্রচন্ড গরমথেকে বাঁচার জন্যতাদের পা মেহেদিপেস্ট দিয়ে আচ্ছাদন করেরাখতো যা গোটাশরীরকে ঠান্ডা রাখতো।বিশেষত যোদ্ধাদের ভিতরেএর প্রচলন ছিলবেশী। তারপর যখনদেখলো শুকিয়ে গেলেচমৎকার রংধারণ করে সেইথেকেই শুরু হয়অঙ্গসজ্জ্বায় মেহেদীর ব্যবহার। এতদ্বাঞ্চলে যে৪টি প্রাচীন সভ্যতাগড়ে উঠেছিল- মিশরীয়সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা,সুমেরীয় সভ্যতা ওএ্যসিরিয় সভ্যতা প্রতিটি সভ্যতায় রঞ্জকহিসেবে মেহেদি ব্যবহার পাওয়াযায়। চিত্রকলার ইতিহাসবিশেষজ্ঞ মার্কিন অধ্যাপক Dr. Marilyn Cvitanic-এর মতেFor over five thousand years henna has been a symbol of good luck, health andsensuality in the Arab world. দক্ষিণ চীনেপ্রায় তিন হাজারবছর ধরে প্রাচীন দেবীসংস্কৃতির সময় থেকেমেহেদী ব্যাপকভাবে প্রেমমূলক র্ধমানুষ্ঠানের সঙ্গেযুক্ত রয়েছে।

প্রাচীন মিশরের খুশি,আনন্দ ও ভালোবাসার প্রতিকরানী নেফারতিতি (খ্রী.পূর্ব ১৩৭০-১৩৩০) ওইতিহাসে সর্বকালের সেরাসুন্দরী ও আবেদনময়ী রানীক্লিওপেট্রা(খ্রী.পূর্ব ৬৯-৩০) নিয়মিত মেহেদীব্যবহার করতেন। ক্লিওপেট্রা কন্যাসেলেনা (Selene also known as Cleopatra VIII of Egypt, খ্রী.পূর্ব৪০-০৬) মেহেদীর নানারকমের ব্যবহার জানতেন। মিসরেরপিরামিডে ফারাও সম্রাটদের মমিতেমেহেদির ব্যবহার হতো।মধ্যযুগের কিছু চিত্রকলায় দেখাযায় কিং সলোমানের সাথেরানী সেবা যখনদেখা করতে যায়তখন রানী মেহেদীব্যবহার করতেন। ভারতেরঅজন্তা গুহাচিত্রেও অঙ্গসজ্জ্বায় মেহেদির ব্যবহার দেখাগেছে। উপমহাদেশে ১২০০খ্রীস্টাব্দ থেকে মেহেদীর ব্যবহার শুরুহয় ও মোগলআমলে প্রাকৃতিক প্রসাধনি হিসেবেমেহেদীর ব্যপকতা ছড়িয়েপরে। মোগল সম্রাটশাহজাহান পত্নি মমতাজকে মিসরেররাজা রাষ্ট্রীয় উপহারহিসেবে মেহেদি ওমেহেদি চারা উপহারদিয়েছিলেন বলে জানাযায়।

০২.মেহেদির পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত কিছু তথ্য:
বাংলা শব্দ মেহেদী,কোথাও মেদি, মেন্দি,কোথাও মৌকা নামেআমাদের দেশে পরিচিত। বাংলাসাহিত্যে নিরি মুল্লকা, মদয়ন্তিকা, গিরিমল্লিকা, নখরঞ্জিকা, বনমল্লিকা নামেমেহেদির বেশ কিছুকাব্যিক নাম পাওয়াযায়। মেহেদি- হিন্দিও উর্দুতে মেহেন্দি, ইংরেজীতে হেনা(Henna), মধ্য-প্রাচ্যে হেন্না,মধ্য-এশিয়ায় ‘আল-খান্না’ নামেপরিচিত যা আরবীশব্দ আল-হিন্না(Al-Hinna) থেকে এসেছে। এরইউনানী নাম হচ্ছেহেনা, আয়ুর্বেদিক নামমদয়ন্তিকা, বোটানিক্যাল নামহচ্ছে লসোনিয়া ইরামিস(Lawsonia Inermis) যালেথরেসিয়া(Lythreaceae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।

মেহেদিগাছ গুল্ম বাছোট বৃক্ষ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ। ঘনশাখা ও পাতাবিশিষ্ট। এটি সাধারণত দুইথেকে ছয় মিটারবা প্রায় ২০ফুট লম্বা হয়েথাকে। পাতাগুলো সরল,প্রতিমুখ বা বিপরীতভাবে সাজানোথাকে, বৃন্তক দেখতেঅনেকটা লেন্সের মতোএবং পাতার অগ্রভাগ সুঁচালো। পাতায়বিশেষ গন্ধ থাকে।কান্ড ছোট এবংআংশিক কাঁটাযুক্ত। ফুলছোট এবং গুচ্ছাকারে ফোঁটে। ফুলেররঙ হলুদাভ সাদাবা হালকা গোলাপি। বৃতিদেখতে লাটিমের মতো।ফুলের পাপড়িগুলো পুরুএবং ভাঁজবিশিষ্ট। পুংকেশরগুলো জোড়ায়জোড়ায় সাজানো থাকে।ফল আকারে মটরদানার সমান এবংধূসর বর্ণের। ফলের ভেতরে ছোট ছোট৮৫-৯৫টি বীজথাকে। শুকনো গুড়ামেহেদীতে ৯% ময়েশ্চার, ১৪.৮% এ্যাশ(ধংয) ও ১০.২% তানিন(ঞধহহরহ) থাকে ।

০৩.মেহেদির বিশ্বব্যাপি ব্যবহার:
মেহেদির সবচেয়ে প্রাচীন ব্যবহার দেখাযায় ন্যাচারাল কুলিংসিস্টেম হিসেবে আরববিশ্বের মরু অঞ্চলে। প্রচন্ড গরমেএকটু আরামের জন্যমধ্যপ্রাচ্য ও উত্তরআফ্রিকার মরুবাসিরা পায়েমেহেদি পেষ্ট লাগাতো। প্রাচীন মিসরেরফারাও সম্রাজ্যে এটিরব্যাপক প্রচলন ছিল।সুসজ্জ্বা ও সুরক্ষার জন্যপিরামিডের মমিদেহের হাতও পা মেহেদিপানিতে চুবানো হতো।ভারতবর্ষ, মধ্যপ্রাচ্য ওউত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রাচীনতম কসমেটিক হিসেবেমেহেদীর ব্যবহার প্রায়৫০০০ বছরের পুরনো।ব্রোঞ্জ যুগ থেকেইদুনিয়াবাসীরা রঞ্জক হিসেবেমেহেদি ব্যবহার করেআসছে। ভারতীয় আদালতেচুলের রঙ হিসেবেমেহেদির ব্যবহারের কথাউল্লেখ আছে যেটাপ্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের। ছত্রাক-রোধী হিসেবেও মেহেদিকার্যকর। কাপড় ওচামড়া সংরক্ষণেও এরব্যবহার হয়। মেহেদিফুল থেকে সুগন্ধী তৈরিহতো বহু প্রাচীনকাল থেকেই।পোকা দমনেও মেহেদিব্যবহৃত হয়। লসোন(Lawson) নামক এক প্রকারপদার্থের উপস্থিতির জন্যইমেহেদিতে রঙ হয়।

মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ,ইহুদী, খ্রীস্টান, শিখসহবিভিন্নধর্মে ঐতিহাসিকভাবে মেহেদীপবিত্রতা ও আধ্যাতিকতার সঙ্গেযুক্ত। পৃথিবীর নানাজাতি ও অধিকাংশ আদিবাসী সমাজেসুস্বাস্থ্য, উর্বরতা, জ্ঞান,সুরক্ষা এবং আধ্যাতিক জ্ঞানহিসেবে প্রতিটি সংস্কৃতিতে বিভিন্ন ডিজাইনের আলাদা অর্থরয়েছে। কখনো এটিশরীরে স্থায়ী রূপদেয়ার জন্য ট্যাটুও সাময়িক সজ্জ্বার জন্যমেহেদী দিয়ে ডিজাইনগুলো করাহয়।

বাংলাদেশে ঈদ ওবিয়ে উপলক্ষে এরব্যবহার অনেকটা আবশ্যিকরূপে প্রচলিত। দুনিয়ার বহুদেশে এটি উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।প্রাক বিবাহ, বিবাহ,গর্ভাবস্থার আটমাস, সন্তানজন্মের ৪০ দিন,সন্তানের নামকরন প্রভৃতি পারিবারিক ওসামাজিক অনুষ্ঠানে আবহমানকাল থেকেবিভিন্ন সংস্কৃতিতে মেহেদির বাহারিব্যবহার হয়ে থাকে।আফ্রিকার অনেক জায়গায়আরোগ্য মুক্তি উপলক্ষ্যে এবংআরব্য সংস্কৃতির বিয়েতেমেহেদি সন্ধ্যা একটিজনপ্রিয় প্রথা যাদক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহেও দিনেদিনে জনপ্রিয় হয়েউঠছে। চীনসহ দক্ষিণএশিয়ার বিভিন্ন দেশেআয়ুর্বেদীয়, ইউনানী ওবিভিন্ন প্রকার অর্গানিক চিকিৎসায় মেহেদীর ব্যবহার হয়েথাকে।

০৪.মেহেদীর চাষ ও বিশ্বব্যাপি মেহেদীর উৎপাদন:
৩৫-৪৫ ডিগ্রীসে. তাপমাত্রা মেহেদীচাষের জন্য উপযোগী। আদ্রআবহাওয়ার তুলনায় অধিকশুষ্ক ও উষ্ণতাপমাত্রার উম্মুক্ত স্থানেউন্নততর মেহেদী জন্মে।১১ ডিগ্রি তাপমাত্রার নীচেমেহেদি জন্মে না।মেহেদী পাতা পরিপক্ক হতে৪-৫ বছরসময় লাগে। ২৫বছর পর্যন্ত লাভজনকপাতা উৎপন্নহয়। ৫০ বছরবয়সী গাছও পাতাদিতে সক্ষম। সামান্য বৃষ্টিপাতেই এটিনতুন ডাল ওপাতা ছাড়ে। গ্রীষ্ণের শেষদিকে মূলত:মেহেদী পাতা তোলাহয় কেননা এইসময়ই মেহেদী পাতাবেশী প্রলম্বিত হয়ও বেশী লসোন(Lawson) ধারণ করে যাগাড় লাল দাগতৈরীর উপযোগী। শীতেরশুরুতে পাতা হলুদবর্ণ ধারণ করেও পাতা ঝরাশুরু হয়। ক্রান্তিয় দেশসমূহতে রপ্তানিযোগ্য মেহেদীর চাষকরা হয়। মেহেদীচাষে বৃষ্টি ওসারের প্রয়োজন অনেককম। তবে সবদেশেএকইভাবে মেহেদি উৎপাদিত হয়না। দেশভেদে চাষেরভিন্নতা রয়েছে। আফ্রিকার দেশসমূহে মাটিকর্ষণ, সার ওপানি ভারতের তুলনায়অনেক বেশী ব্যবহৃত হয়।ভারতে যে সমস্তএলাকায় বাৎসরিকবৃষ্টিপাত ৪০০ মি.মি. সেখানেমেহেদী ভালো জন্মে।কীটনাশকের ব্যবহারও তেমনপ্রয়োজন পড়ে না।২০হাজার থেকে ২লাখ গাছ হেক্টরপ্রতি লাগানো যায়যা নির্ভর করেপানির প্রাপ্যতার উপর।বীজ থেকে নার্সারি করেঅথবা কলম করেমেহেদীর চাষ হয়।বীজতলার জন্য হেক্টরপ্রতি ৩-৫কেজি বীজ লাগে।হেক্টর প্রতি ১০০০থেকে ৩ হাজারকেজি পাতা উৎপন্ন হয়যা শুকনো গুড়োকরলে ১৫০০ থেকে৪৫০০ কেজি পর্যন্ত গুড়োমেহেদী পাওয়া যায়।মেহদী পাতা বছরে২ থেকে তিনবারতোলা হয়। কাচাপাতা শুষ্ক ওঅন্ধকার বা কমআলোতে শুধু প্রাকৃতিক বাতাসেশুকানো হয়। শুকনোঝরঝরে হলে একটিসেমি অটোমেটিক মেশিনেবাছাই করা হয়যাতে পাতা ছাড়াঅন্য সকল কিছুযেমন পাথর, কান্ড,বীজ, আবর্জনা ইত্যাদি রিমুভহয়। তারপর কয়েকটিপ্রসেসে গুড়ো করাহয়। গুড়ো মেহেদীকে আদ্রতামুক্ত করতেআরেকটি মেশিনে প্রসেসহয়ে ল্যাবটেষ্টের পরেপ্যাকেট করা হয়।

সাহারা মরুভূমির দেশসমূহ, মধ্যপ্রাচ্য ওপাকিস্তান-ভারতের মরুঅঞ্চলে বানিজ্যিকভাবে মেহেদীচাষ হয় ওএখান থেকেই সারাপৃথিবীর মেহেদীর যোগানদেয়া হয়। মেহেদীর উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশসমূহ হচ্ছেঃ মরক্কো, মিশর,সুদান, ওমান, ইরাক,পাকিস্তান, ভারত এছাড়াআভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্যবানিজ্যকভাবে মরুতানিয়া, লিবিয়া,চাঁদ, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, সৌদিআরব, ইরান, ইজরাইল,ইয়েমেন, স্পেন, তুরস্ক,তিউনেশিয়া ও অষ্ট্রেলিয়ায় মেহেদীর চাষকরা হয়। বাংলাদেশের মতউপক্রান্তিয় দেশসমূহে, ভূমধ্যসাগরীয় দেশসমূহ ওদক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রাকৃতিকভাবেই যুগযুগ ধরে মেহেদীজন্মে আসছে যাপ্রতিটি দেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হিসেবেবিবেচিত।

আমাদের দেশের অনুর্বর, শুষ্কও পরিত্যক্ত মাটিতেযে জায়গা সব্জিচাষের অনুপযোগী সেইমাটিতে বানিজ্যিকভাবে মেহেদীর চাষসম্ভব। সাভারের কিছুজায়গায় ইতোমধ্যেই বানিজ্যিকভাবে মেহেদীচাষ শুরু হয়েছে।সাভারের সালামাসি গ্রামের কৃষকমোঃ কসিমুদ্দিন নামেরএক কৃষক দশবছর ধরে মেহেদীচাষ করছে। তারদেখাদেখি এখন বেশকিছু জমিতে এখনমেহেদী চাষ করছেসাভারের অনেক কৃষক।

০৫.বিশ্বব্যাপি মেহেদীর বাজার ও বিপনন:
একাবিংশ শতাব্দিতে বিশ্বব্যাপি মেহেদির চাহিদাও যোগান সম্পর্কিত কার্যকর কোনগবেষণা হয়েছে বলেজানা যায় না।গত শতাব্দির ৮০এর দশকের পরেবিশ্বব্যাপি সার্বজনিন সৌন্দর্য্য চর্চায়মেহেদী একটি বিপ্লব এসেছে। ন্যাচারাল হেয়ারডাই হিসেবে এরচাহিদা খুবই ক্রমবর্ধমান। যারকারনে গত কয়েকদশকে মেহেদীর চাহিদাকয়েকশত গুন বেড়েছে। এইক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথেপাল্লা দিতে গিয়েউৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাহারিপ্রকারের কৃত্রিম পেস্টমেহেদী বাজারজাত করছে।বিজ্ঞানের কল্যানে এরব্যবহারিক গুনমান কখনোকখনো প্রাকৃতিক মেহেদীকেও ছাড়িয়েযায়। আজকের পৃথিবীতে আজোকোটি কোটি পরিবারবাড়ির বাগানের মেহেদিগাছ থেকে পাতাউত্তোলন করে সরাসরিব্যবহার করে আরএর পাশাপাশি নাগরিকজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশহয়েছে গুড়ো মেহেদীও পেষ্ট মেহেদী। যারকারনে মেহেদীর সামগ্রিক চাহিদাপ্রক্কলন করা জটিলগবেষণার বিষয়।

১৯ শতকে শুধুইস্তাম্বুলের নারীরা প্রতিবছর চুলে ১৫০০০পাউন্ড মেহেদী ব্যবহার করতো।১৯৫৫ সালে ভারতে২৮০০ টন মেহেদীউৎপন্ন হয়েছিল। একাবিংশ শতাব্দির প্রাক্কালে পাকিস্তানে বছরে১৫০০০ মে.টনমেহেদী উৎপন্নহয় যার অর্ধ্বেক তারারপ্তানি করে। ভারত,মিশর ও সুদান১৯৭৫-১৯৮০ সালপর্যন্ত প্রতিবছর মোটগড় রপ্তানি ছিল৬০০০-৮০০০ হাজারটন। ফাও এররিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৮৮-১৯৯৩ পর্যন্ত ৪৫০০-৭৬০০ টনমেহেদী বছরে রপ্তানি করতো।১৯৯২ সালে বিশ্ববাজারে টনপ্রতি মেহেদীর মূল্যছিল ২৫০-৭০০ইউ এস ডলার।মেহেদীর প্রকরণ ওমানের কারনে দামেরএই তারতম্য হয়।২০০৩-৪ এশুধু রাজস্থানেই উৎপন্ন হয়েছে৩৭৫৪০ টন। তন্মেধ্যে রপ্তানী করেছে১০৫০০ টন যারমূল্য ৯১ কোটিভারতীয় রুপি। আরআজকের ভারতে প্রচুরমেহেদি প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়েউঠেছে যার কোনকোনটির উৎপাদনক্ষমতা ১০ হাজারটনেরও বেশী। গুজরাটের পালিজেলার সুজাত নগরেএরুপ শতাধিক শিল্পকারখানা তৈরী হয়েছেযারা ভারতে বানিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মেহেদীর ৯০ভাগের যোগান দেয়।

৮০ এর দশকেগড়ে প্রতি বছরসৌদি আরব ৩০০০টন, ফ্রান্স ২৫০টন, ব্রিটেন ১০০টন, আমেরিকা ৪০০টন মেহেদী আমদানীকরেছে। পাশ্চত্য দেশগুলোতে বিগতদশ/বারো বছরেবিশাল বাজার তৈরীহয়েছে। যদিও ওসবদেশে ইদানিং মেহেদীচাষ শুরু হয়েছেতবে তা একেবারেই সৌখিনপর্যায়ে। রপ্তানিকারক দেশসমূহের মধ্যেভারতই প্রধান। ভারতছাড়াও মরক্কো, মিশর,সুদান, ওমান, ইরাক,পাকিস্তান ও অষ্ট্রেলিয়া মেহেদীরপ্তানি করছে। বিগততিন দশকে মেহেদীর চাহিদাবেড়েছে কয়েকশত গুন।যদিও এর সিংহভাগ অংশইকৃত্রিম মেহেদীর দখলে।এর মূল কারণপ্রাকৃতিক মেহেদী দিয়েভালো রঙ আনতে৩ থেকে ৪ঘন্টা সময় লাগেশুকনোর জন্য সেখানেকৃত্রিম পেস্ট মেহেদীতে রঙহয় কয়েক মিনিটে।

০৬.বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মেহেদির কিছু ব্যতিক্রমি কার্যকর ব্যবহার:
বিশ্বব্যাপি নর-নারীরানখ, চুল, হাত,পা সহ দেহেরপ্রায় সকল অংশেইমেহেদীর ব্যবহার করে।সৌন্দর্যায়ন ও ঔষধিব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয়ও লোকজ বিশ্বাস ওসংস্কারের সাথে এটিসম্পর্কিত। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেবহুবিধ কাজে মেহেদীর বিচিত্র ব্যবহৃত রয়েছে।মেহেদীর পাতা ছাড়াওএর ফুল, বীজ,বাকল, কান্ড, ফলেরখোসাও নানা কাজেব্যবহৃত হয়। প্রাচীন কালথেকেই মেহেদী ফুলথেকে সুগন্ধি তৈরীহয়। উত্তর ভারতও জাভায় বানিজ্যিকভাবে মেহেদীফুল থেকে সবুজরঙের খুবই দামীসুগন্ধি তৈরী করাহয়। প্রাকৃতিকভাবে কালোরং পাওয়ার জন্যমেহেদীর সাথে Indigo (নীল) মিশ্রনকরা হয়। উলও সিল্ক জাতীয়কাপড়ে অর্গানিক কালারের জন্য,ঘোড়ার কেশর ওলেজের চুল রঙিনকরতে মেহেদীর ব্যবহার হয়।মরক্কোসহ উত্তর আফ্রিকায় এখনওচামড়া প্রক্রিয়াজাত করতেমেহেদি ব্যবহার করে।সানব্লক হিসেবে বিভিন্ন আদিবাসি মানুষছাড়াও গৃহপালিত পশুরনাকে মেহেদী পেস্টব্যবহার করা হয়।

০৭.মেহেদির প্রকরণ:
প্রাকৃতিকভাবেআহরিত মেহেদি মূলতঅঙ্গসজ্জ্বা ও চুলেররং হিসেবে হাজারবছর ধরে মানুষসরাসরি পেষ্ট করেব্যবহার করে আসছে।মেহেদি সংরক্ষণের জন্যমেহেদী পাতা বাতাসেশুকিয়ে পউডার তৈরীকরা হয়। আজওএভাবেই বিশ্ববাসি বাজারথেকে সরাসরি মেহেদীগুড়ো সংগ্রহকরে প্রাকৃতিক মেহেদীর চাহিদামিটায়। তবুও ফ্যাশনপ্রিয়তার প্রয়োজনীয়তার কারনেযুগের বিবর্তনের সাথেসাথে মেহেদীর প্রকরণেও বৈচিত্র এসেছে।তবুও বাজারে যেপ্রাকৃতিক মেহেদী পাওয়াযায় তা মূলততিন প্রকার:

০১. ব্ল­াক হেনা (Black Henna): আমাদের দেশেইংরেজ আমলে নীলচাষ হতো আমরাজানি। ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের সূচনা কালিনসময় শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেআমাদের দেশের নীলবা ইন্ডিগো অর্গানিক কালারের চাহিদামিটিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে কালোমেহেদী বলতে মেহেদীর সাথেইন্ডিগোর মিশ্রণকেই বুঝায়।চুল ও ত্বকেরজন্য এই কালোমেহেদীই একসময় সবাইব্যবহার করতো। কিন্তুপ্রাকৃতিক নীল বাইন্ডিগোর দুস্প্রাপ্যতার কারণেমেহেদীর সাথে পিপিডিবা প্যারা-ফেনিলেনডিয়ামাইন (para-phenylenediamine) নামক একপ্রকার রাসয়নিক পদার্থসংমিশ্রন করে। সারাপৃথিবীতে কালো মেহেদীবলতে এটাকেই বুঝানোহয়। কালো মেহেদীমূলত চুলের জন্যহলেও অনেকে ত্বকেরডিজাইনে এটি ব্যবহার করে।কিন্তু যাদের এলার্জি সমস্যারয়েছে তাদের জন্যএটির ব্যবহার অনেকসময় ত্বকে চুলকানি বা ক্ষতের সৃষ্টি করতেপারে।

০২. লাল মেহেদী (Red Henna): লাল মেহেদীহচ্ছে সবুজ রঙেরপাউডার যা থেকেখড়ের মত গন্ধআসে যা মূলতলসোনিয়া ইনারমিস (Lawsonia Inermis) বিশ্বব্যপি যাহেনা নামে পরিচিত। প্রাকৃতিক মেহেদীর ভিতরেএই লসোন নামকপদার্থটি মূলতো গাঢ়লাল বর্ণ তৈরীকরে। এই লালমেহদী ত্বক ওচুলের জন্য খুবইনিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। চুলেরজন্য এটি সর্বোত্তম কন্ডিশনার। ত্বকও চুলের ধরণেরউপর রঙের সেডনির্ভর করে। এটিইমূলত ন্যাচারাল হেনা।

০৩. হোয়াইট হেনা (Neutral Henna) : নিউট্রাল হেনাএক প্রকারের সবুজপাউডার যা থেকেকাটা কাঁচা ঘাসেরমত গন্ধ আসে।এটি চুলে কোনরঙ তৈরী করেনা। নিউট্রাল হেনাআসলে কোন হেনানয় এটি সেনাইটালিকা (Senna italica) নামকগাছের গুড়ো যাকেক্যাসিয়া ওবোভাটা ও(Cassia Obovata) বলে।এর ভিতরে একপ্রকারের প্রাকৃতিক এসিডরয়েছে যা এন্টিফাঙাল, এন্টি মাইক্রোবিয়াল ওএন্টি ব্যাকটেরিয়াল যাচুলকে লম্বা, উজ্জ্বল ওস্বাস্থ্যবান করে। এটিচুল পড়াও রোধকরে। এটি চুলেকোন রং তৈরীকরে না কিন্তুচুলে কিছুটা সোনালীরং আনে। এটিমিশরীয় এলাকায় পাওয়াযায়। মেহেদীর সাথেদারুচিনির মিশ্রণ করেওপ্রায় নিউট্রাল হেনাবলে বিক্রি করে।

প্রাকৃতিক এই মেহেদিগুলো ছাড়াওবাজারে নানা প্রকারের টিউবও কোনে নানারঙের পেস্ট মেহেদীপাওয়া যায় বডিডিজাইনের জন্য। প্রাকৃতিক মেহেদীতে প্রকৃতরং আসতে অনেকসময় লাগে এবংরঙের বৈচিত্রও খুবসীমাবদ্ধ বিধায় প্রাকৃতিক মেহেদীতে প্রাপ্ত উপাদানবিশ্লেষণ করে কৃত্রিমভাবে তৈরীমেহেদীর চাহিদা সবচেয়েবেশী। রঙিণ মেহেদী,গ্লিটার মেহেদী পুরোটাই কৃত্রিমভাবে তৈরী।চুল ও ত্বকেরজন্য বাজারে হাজাররকমের মেহেদী পাওয়াযায় তবে আমাদেরদেশে মেহেদীর মাননিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নাথাকায় অনেক কোম্পানির পন্যেরমান নিয়ে প্রশ্নউঠছে।

০৮.বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মেহেদি ডিজাইনের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য:
আফ্রিকানডিজাইন: আফ্রিকান ডিজাইনে তাদেরলোকজ, বিচিত্র, বন্য-সাহসী সংস্কৃতির প্রতিরূপ ফুটেউঠে। তাদের অধিকাংশ ডিজাইনগুলো জ্যামিতিক আকারেমোটা দাগে করা।আদিবাসী সংস্কৃতিতে তাদেরকিছু পবিত্র প্রাণী,দেবতা ও অদ্ভুতকিছু প্রতিক সম্বলিত যাস্থান ও সময়েরবিভিন্নতায় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ স্বাভাবিক দর্শনেতা অন্যের কাছেঅর্থহীন মনে হতেপারে। হাত-পাছাড়াও মুখমন্ডলসহ শরীরেরযে কোন স্থানেতারা ডিজাইন করে।কিছু কিছু ডিজাইনবিশেষ সামাজিক স্বীকৃতির বৈশিষ্ট্য হিসেবেনির্দিষ্ট জনের জন্যনির্ধারিত থাকে।

এরাবিয়ানডিজাইন: এরাবিয়ানরা সংক্ষিপ্ত সরলডিজাইন পছন্দ করে।মুসলিমরা অনেকে নারীপুরুষ নির্বিশেষে আরবীক্যালিগ্রাফিকডিজাইন পছন্দ করে।মেয়েরা লতাপাতাসহ ফ্লোরাল ডিজাইনখুব পছন্দ করে।গোটা হাত কিংবাশরীরে ভরাট ওবড় আকৃতির ডিজাইনের প্রচলনকম। এবস্ট্রাক্ট লাইনডিজাইনের প্রচলন রয়েছে।

ইন্ডিয়ানডিজাইন: ভারত উপমহাদেশে মেয়েরাভরাট, দীর্ঘ, কারুকার্যময় জটিলডিজাইন পছন্দ করেবিশেষ করে বিয়েতেকন্যার বাহুর গোড়াথেকে আঙুলের নখপর্যন্ত ধারাবাহিক গল্পেরমত ডিজাইন করে।নানা রঙের মেহেদীর সাথেগ্লিটার ও ষ্টোনের ব্যবহার লক্ষনীয়। নানারকম কালার শেডও ডট ব্যাপকব্যবহৃত হয়। ননমুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানীয়প্রানী যেসনমাছ, ময়ুর, হাতি,পাখি ইত্যাদির ডিজাইনদেখা যায়। পশ্চিমভারতের লোকজ সংস্কৃতিতে সূর্যের বিচিত্র ডিজাইনলক্ষনীয়। সনাতন ধর্মেরবেশ কিছু প্রতিকও আদিবাসীরা নিজস্বসংস্কৃতি ও বিশ্বাসের কিছুপবিত্র প্রতিক মেহেদীর ডিজাইনে ফুটিয়েতোলে। পাকিস্তানের ট্রাডিশনাল ডিজাইনে ফ্লোরাল ডিজাইনের পাশপাশি চাঁদ-তারার ব্যবহার দেখাযায়। ইদানিং উপমহাদেশের ডিজাইনে সাধারণ,হাল্কা ও আধুনিকতার ছাপপড়েছে।

০৯.মেহেদির পেস্ট বানানোর পদ্ধতি: বাজারের পেষ্টমেহেদী এখন খুবইসহজলভ্য। টিউব কিংবাকোনাকৃতির এই মেহেদীগুলো কৃত্রিম উপায়েবানানো হয় বলেসকল কোম্পানির পণ্যেরগুণগতমানের নিশ্চয়তা পাওয়াযায় না। বাজারেঅবশ্য আমদানীকৃত গুড়োমেহেদীও পাওয়া যায়তবে তার মানওপ্রশ্নাতীত নয়। তবেসবচেয়ে উত্তম হাতেবানানো মেহেদী। বাড়ীতেমেহেদী গাছ নাথাকলেও কাচা বাজারেডালসমেত মেহেদীপাতা পাওয়াযায়। কাচা পাতাথেকে মেহেদী বানানোর পদ্ধতিহচ্ছে:

১. পরিষ্কার কাঁচা পাতা মিহি করে বেঁটে নিতে হবে।
২. মিহি করে বাটা কাঁচা পাতার পেস্টের সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
৩. কাঁচা পাতার পেস্টের সাথে চা বা কফির কড়া লিকার মেশাতে পারেন। এতে মেহেদির রং গাঢ় হয়।
৪. কাঁচা পাতার পেস্টের সাথে সামান্য পান খাওয়ার খয়ের মেশাতে পারেন। এতেও রং গাঢ় হবে।
৫. মেহেদি পাতার শুকনো গুঁড়ো হলে তা পেস্টে পরিণত করার জন্যে একটু গরম পানিতে মিশিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। তাহলেই পেস্ট ব্যবহারের উপযোগী হবে।
৬. গুঁড়ো পেস্টের সাথেও লেবুর রস, চা বা কফির লিকার বা খয়ের মেশাতে পারেন।
৭. পেস্টের ঘনত্ব ঠিক করার জন্যে প্রয়োজনমতো লেবুর রস ও একটু চিনি গোলানো পানি পেস্টের সাথে মিশিয়ে নিতে পারেন।
৮. মেহেদীর রং কালো করতে চাইলে মেহেদীর গড়োর সাথে প্রাকৃতিক নীল (Indigo) মেশাতে হবে।

এই পদ্ধতি মূলতবডি ডিজাইনের জন্য।বাড়ির মেহেদী হলেচুলেও লাগাতে পারেনসেক্ষেত্রে খয়ের ওচিনি পানি মিশাবেন না।তবে বাজার থেকেগুড়ো মেহেদী কিনলেঅবশ্যই ব্যবহার বিধিটিভালোভাবে বুঝতে হবে।প্যাকেটের গায়ে ব্যবহার বিধিও পণ্যের মেয়াদদেখে কিনতে হবে।বাজার থেকে কেনাহেয়ার ডাই দিয়েত্বকে ডিজাইন করবেননা। প্রাকৃতিক এইমেহেদিগুলো ছাড়াও বাজারেনানা প্রকারের টিউবও কোনে নানারঙের পেস্ট মেহেদীপাওয়া যায় বডিডিজাইনের জন্য। প্রাকৃতিক মেহেদীতে প্রকৃতরং আসতে অনেকসময় লাগে এবংরঙের বৈচিত্রও খুবসীমাবদ্ধ বিধায় প্রাকৃতিক মেহেদীতে প্রাপ্ত উপাদানবিশ্লেষণ করে কৃত্রিমভাবে তৈরীমেহেদীর চাহিদা সবচেয়েবেশী। রঙিণ মেহেদী,গ্লিটার মেহেদী পুরোটাই কৃত্রিমভাবে তৈরী।চুল ও ত্বকেরজন্য বাজারে হাজাররকমের মেহেদী পাওয়াযায় তবে আমাদেরদেশে মেহেদীর মাননিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নাথাকায় অনেক কোম্পানির পন্যেরমান নিয়ে প্রশ্নউঠছে।

১০.মেহেদির ব্যবহার বিধি:
বডি ডিজাইনের জন্যমেহেদী লাগানোর নানারকমের পদ্ধতি রয়েছে।আগে প্রায় সর্বত্রই কাঠিবা টুথপিক দিয়েমেহেদি লাগানো হতো। এখনসবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতিহচ্ছে কোন পদ্ধতি। ফয়েলপেপার, সিলোফেন বাপিভিসি বা ওয়াটারপ্র“ফ পেপারদিয়ে এই কোনগুলো হাতেবানানো যায়। বাজারেঅবশ্য বিভিন্ন দেশেকোনকৃত পেষ্ট মেহেদীপাওয়া যায়। এছাড়াজ্যাকার্ড বোতল, ক্যারোট ব্যাগও ব্যবহৃত হয়।মরক্কোতে সিরিঞ্জ পদ্ধতিখুব জনপ্রিয়। যেপদ্ধতিতেই মেহেদী লাগাননা কেন মেহেদীব্যবহারের সময় আরোকিছু বিষয় লক্ষ্যরাখা উচিৎ।

১. মেহেদি লাগানোর আগে হাত ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। ময়েশ্চারাইজার বা লোশন-জাতীয় কিছু লাগানো যাবে না।
২. মেহেদি রাতে দিলে সকালে এর রংটা বেশি ভালো লাগবে। ঈদের মেহেদী তাই চাঁদ রাতে লাগানোর রীতি রয়েছে।
৩. টিউব মেহেদি দেয়ার আগে হাতে একটু লাগিয়ে দেখুন অ্যালার্জি হয় কি না। সব টিউব মেহেদী গুণগতমান সম্পন্ন নয়।
৪. মেহেদি লাগানোর পর যদি দেখেন উঠে যেতে চায় তাহলে লেবুর রস ও চিনি গোলা পানি ভিন্ন পাত্রে নিয়ে তুলোতে ভিজিয়ে মেহেদির প্রলেপের ওপর আস্তে আস্তে চেপে চেপে দেবেন। এতে পেস্ট ঝরে পড়বে না।
৫. দুই থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত মেহেদি হাতে রাখা উচিত। পুরো মেহেদি শুকিয়ে যাবার পর ভোঁতা ছুরি কিংবা চামচ দিয়ে তুলে ফেলবেন।
৬. মেহেদি ওঠানোর পরে হাতে একটু চিনির সিরাপ লাগিয়ে নিলে রঙ ভালো হয়। তারপর ৪/৫ মিনিট আগুনে হাত সেঁকে নিন।
৭. পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে হাতে সরিষার তের মেখে নিন। সম্ভব হলে পরবর্তী ছয় ঘণ্টা পানি লাগাবেন না। সাবান পানি থেকে হাত যতটা সম্ভব দূরে রাখুন।
৮. চুলের জন্য চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু করে শুকিয়ে নিতে হবে। চিরুনি ও ব্রাশ দিয়ে
৯. মেহেদি কেনার আগে অবশ্যই ভালো কোম্পানি দেখে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ দেখে নিবেন।

ইন্সট্যান্ট মেহেদীর দাগউঠানো সম্ভব নয়।ন্যাচারাল প্রসেসে নখকিংবা ত্বকের পরিবর্তনের ভিতরদিয়েই মেহেদীর দাগদুরভিত হয়। এবংসেটাই উত্তম। সাধারনত ২থেকে ৬ সপ্তাহপর্যন্ত দাগ থাকে।তবে চাইলে এসময়টি কমিয়ে আনাসম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রচুরপানি দিয়ে বারবার ঘষতে হবে।ক্লোরিন ব্যবহারে দাগহাল্কা হয়। ব্রাশেটুথপেষ্ট মিশিয়ে নিয়মিতভাবে ঘষলেউপকার পাওয়া যায়।Alpha-Hydroxy Acid or Beta Hydroxy acid দিয়ে ভিজিয়েরাখলে দাগ হাল্কাহবে। যে কোনফার্মেসীতে এটি পাওয়াযায়। তবে কোনভাবেই ব্লিচিং পাউডারব্যবহার করা উচিৎনয় কেননা এটিত্বকের ক্ষতি করে।

১১.শিল্পে মেহেদির ব্যবহার:
মেহেদী বা হেনাসুপ্রাচীন কাল থেকেচামড়া ও কাপড়ডাইংয়ে ব্যবহার হতো।শিল্প বিপ্লবের পরেএর ব্যবহার বিশ্বব্যাপি ছড়িয়েপরে। সুদান, মরক্কো,ইরান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত,চীন ও অষ্ট্রেলিয়াসহ নানাদেশে বানিজ্যকভাবে হেনাউৎপন্ন হতেথাকে অর্গানিক ডায়িংয়ের জন্য।ভারতবর্ষের কৃষকদের এইসময় ইংরেজরা জোড়পূর্বক নীলচাষে বাধ্য করেছিলশিল্পে ইন্ডিগোর ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের জন্য।সিল্ক ও উলজাতীয় কাপড়ে কালচেগাঢ় লাল রংয়েরজন্য হেনা ব্যবহৃত হয়।পার্শিয়ান কার্পেটেও এরব্যবহার হয়। চামড়ারসাথে লৌহ ওলবনের সংমিশ্রনে dark-blue or greenish-black রঙ তৈরীহয়। হেনাসহ যেকোনপ্রাকৃতিক তানিন পশুরচামড়ারকে ফ্লাক্সিবল ওষ্ট্রং করে। চামড়াররেসিন্ট্যান্সবাড়ায়। পরবর্তিতে কৃত্রিমভাবে তানিনআবিস্কৃত হবার পরএর চাহিদা খুবইকমে যায়। কিন্তুএকাবিংশ শতাব্দিতে এসেউন্নত বিশ্বে অর্গানিক পন্যেরনতুন চাহিদা তৈরীহয়। জাপানসহ পৃথিবীর উন্নতদেশের এক্সক্লুসিভ অনেকবায়াররা এখন অর্গানিক পন্যেরদিকে ঝুকে পড়েছেবিধায় শিল্পে মেহেদীর নতুনকরে চাহিদার তৈরীহয়েছে। পোষাক ওচামড়া শিল্প ছাড়াওঅন্যান্য শিল্পেও মেহেদীর তানিনব্যবহার হচ্ছে।

১২. মেহেদি গাছের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার তুলে ধরবো:
মেহেদীর পাতা, ফলও ফুল ছাড়াওএর কাঠ ওবাকলের রয়েছে বহুবিধঔষধিগুণ। এর বাইরেওনানা প্রকারের ব্যবহারিক জিনসতৈরী মেহেদীর কাঠও বাকল দিয়ে।মেহেদীর কাঠের ফাইবারখুবই সুন্দর শক্তপ্রকৃতির। ভারতে একাঠ দিয়ে তাবুরক্লিপ ও নানাপ্রকার টুলসের হাতলতৈরী হয়। ইন্দোনেশিয়ায় মেহেদীর ডালদিয়ে বানানো হয়টুথব্রাশ। মেহেদী গাছেরবাকল দিয়ে কেনিয়ায় সুদৃশ্য বাস্কেট তৈরীহয়। তবে উৎকৃষ্টমানের জ্বালানি হিসেবেএর ব্যবহার সবচেয়েবেশী।

মেহেদিগাছের বিভিন্ন অংশের ঔষধিগুণঃ

শিকড় : লেপরোসি(Leprosy), স্কিন ডিজিজ,অ্যামের্নোহা (amenorrhoea),ডাইসমের্নোহা (dysmenorrhoea),প্রিমেচিউর গ্রেয়িং হেয়ার.
পাতা : বানিংসেনশন, ডাইরিয়া, ডিসেন্টিরি, লেপরোসি (leprosy), বয়েলস (boils), লিওকডেরমা (leucoderma), স্ক্যাবিস, এনেমিয়া(anemia), হেমোরহাগস ( hemorrhages), হেয়ার, হেয়ারগ্রেনেস, আমের্নোহা(amenorrhoea), এ্যান্ড জন্ডিস (jaundice).
ফুল : বানিংসেনশন, কারডেওপ্যাথি(cardiopathy), এমেনিয়া(amentia), ইনসোনিয়া(insomnia), এ্যান্ড ফিভার (fever).
ফল : ইন্টেলেক্ট প্রোমটিং (Intellect promoting), কন্সটিপেটিং (constipating), ইন্টারমিটেন্ট ফিভারস (intermittent fevers), ইন্সানিটি (insanity), এমেনিয়া(amentia), ডাইরিয়া, ডিসেন্টিরি, এ্যান্ড গ্যাস্ট্রোপ্যাথি (gastropathy).

১৩. মেহেদিরঔষধিগুণঃ
মেহেদী মানব সমাজেরজন্য প্রকৃতির একঅনবদ্য দান। এররয়েছে এন্টি ফাঙাল,এন্টি মাইক্রোবিয়াল, এন্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টি-ইনফ্লেমেটরী, কুলিং,হিলিং ও সিডেটিভসহ অনেকগুনাগুণ যা মানবদেহ ও মনেরবিভিন্ন রোগ প্রশমনকারী। তাইহাজার হাজার বছরধরে মানব জাতিপাথ্য হিসেবে মেহেদীগাছের বিভিন্ন অংশনানা কারনে ব্যবহার করেআসছে। এর ঔষধিগুণাগুণের ব্যাপকতা এতবিশাল যে দুএকটি পর্বে তাসম্পর্কে সাম্যক কোনধারণা দেয়া সম্ভবনয়। আমরা চেষ্টাকরবো পরবর্তি প্রতিটি পর্বেকয়েকটি রোগ নিয়েকথা বলতে।

জন্ডিস, শ্বেতপ্রদহ ও শুক্রমেহ রোগে।