১৫ ই আগস্ট, ১৯৯৩, ” সুমন জাহিদ গ্রেফতার”
………………………………………………………
আমাদের পরিবার কিংবা বংশের অন্য কারো জেল খাটার ইতিহাস নেই অথবা বলা যায় বংশের কেউ কোন দিন জেল খেটেছে বলে শুনিনি । জেল খেটেছে কেবল আমার সহোদর ছোট ভাই সুমন জাহিদ । তার মামলা নং ৫৫/০৮/৯৩, তারিখ ১৫ ই আগস্ট, ১৯৯৩ ইং, মতিঝিল থানা।
১৫ ই আগস্টের শোক মিছিল করতে গিয়ে আব্দুল গনি রোড হতে গ্রেফতার হয় সুমন জাহিদ । সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ১৫ ই আগস্টের শোক রালি হতে সে গ্রেফতার হয় । ১৫ ই আগস্ট তখন জাতীয় শোক দিবস ছিল না ।শোক রালি করা ও এখনকার মত সহজ ছিল না। এখন হয়ত অনেকের কাছে অবাক লাগবে। তবে সুমনের গ্রেফতার নিয়ে বাবা লজ্জা পেতেন না । তাঁর ডায়েরীর পাতায় দেখা যায় সে হীনমন্যতায় না ভুগেই লিখেছেন, ” সুমন জাহিদ গ্রেফতার “।
তখন আমার কাজ ছিল নিয়মিত ডিবি অফিসে যাওয়া ।সুমন জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের মেধাবী ছাত্র । সে এইচ এস সি পরীক্ষায় মানবিক শাখায় ঢাকা কলেজ হতে স্টার মার্কস পেয়েছে । স্কুল পর্যায় হতে উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক, কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা , বিজ্ঞান মেলায় অগনিত বার সে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সেই সব সার্টিফিকেট নিয়ে নিয়মিত ডিবি অফিসে যেতাম। সুমন জাহিদ ঢাকা কলেজের বার্ষিকী সম্পাদক ছিল।তার সম্পাদিত অনিন্দ্য সুন্দর বার্ষিকী নিয়ে যেতাম ।ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা খুব ভাল ছিল।সে হয়ত আমার দুশ্চিন্তা কমাতে বলত, আমাদের তদন্তে তোমার ভাই মেধাবী, ভাল ছাত্র ও ভদ্র । ১৫ ই আগস্টের শোক রালি করা ছাড়া তার কোন অপরাধ নেই । আমরা ভাল তদন্ত রিপোর্ট দিচ্ছি ।শিঘ্রই সে মুক্তি পেয়ে যাবে ।
আমি ও বাবা সুমনের সাথে দেখা করতে যখন জেলখানায় যেতাম।আমরা শুধু কাঁদতাম ও হাসিমুখে থাকত এবং আমাদের সাত্ত্বনা দিতে চেষ্টা করত।নিরপরাধ ভাইকে জেলে রেখে পৃথিবীর সব আনন্দ আমাদের কাছে কান্নায় পরিনত হত। ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে ডিবি অফিস আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে। ২ অক্টোবর, ১৯৯৩ তারিখে সুমন জাহিদ মুক্তি পায় ।ঐ দিন সন্ধ্যা ছয় টায় টি এস সি তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাকে সংবর্ধনা দেয়। বাবার ডায়েরীর পাতা উল্টাতে গিয়ে মনে পড়ল ১৫ ই আগস্ট, ১৯৯৩ এর কথা,সুমনের গ্রেফতার হওয়ার কথা, মিন্টু রোডের ডিবি অফিসের কথা, নাজিম উদ্দিন রোডের জেলখানার কথা।
– মঈনুল ইসলাম
১৫ আগস্ট, ২০১৮