চলে গেলেন আমাদের গর্বের জামাই

0
3001

চট্টগ্রামের রবিন, বাংলাদেশের এবি, সঙ্গিত বিশ্বের আইয়ুব বাচ্চু সুরের চিরন্তন পাখি হয়ে আকাশে উড়াল দেয়ার পর আমরা জানতে পারলাম তিনি আমাদেরও প্রিয় স্বজন ছিলেন।

আইয়ুব বাচ্চুর কনিষ্ঠ ভাই ইরফানের স্ত্রী অনন্যা, আমার অন্তুর বন্ধু জয়ের একমাত্র বোন। সেই হিসেবে বাচ্চুর পরিবারের অনেক সুখ-দুঃখের সাথী জয়। জয়ের বক্তব্য বাংলাদেশের খুব কম সেলিব্রেটি আছে যিনি বাচ্চু ভাই’র মত একটি শুদ্ধ যাপিত জীবনের অধিকারী ছিলেন। বিশেষ করে পরিবারের প্রতি বাচ্চু ভাই’র রেসপনসিবিলিটি-কন্ট্রিবউশন বা সেক্রিফাইস চলমান সমাজে খুবই বিরল। সাধারণত সেলিব্রেটিদের ব্যক্তিগত জীবনে যেসকল দোষ, ত্রুটি বা স্খলন সমাজ স্বাভাবিক বলেই ধরে নেয় বাচ্চু ভাইকে তা-ও কোনদিন স্পর্শ করেনি। বাচ্চু ভাই সত্যি মানুষ ছিলেন, সকল মানবিক গুণের আধার- একজন সত্যিকারের মানুষ।

সেই শূণ্য হাতে যখন তিনি ঢাকায় এলেন ১৯৯১ সালে, সেই মেস জীবনেই তিনি প্রেমে পড়েছিলেন চন্দনার। কি গভীর সেই প্রেম। বাচ্চুর বয়ানেই আছে- “চন্দনা, আমার স্ত্রী, সে একসময় আমার প্রেমিকা ছিলো। তাকে অনেকদিন ওর পরিবার দেখতে দেয়নি আমাকে। তখন চন্দনাকে নিয়ে গান লিখলাম ফেরারী এই মনটা আমার…আমি বুঝিনি গানটা এত বিখ্যাত হবে।”
আইয়ুব বাচ্চুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু কুমার বিশ্বজিৎ। কুমার বিশ্বজিতের বিখ্যাত গান চন্দনা গো রাগ করো না…। এক টিভি শোতে দুই বন্ধু উপস্থিত, উপস্থাপকের প্রশ্ন বাচ্চু ভাইয়ের বউয়ের নাম তো চন্দনা অথচ গান গাইলেন কুমার বিশ্বজিৎ! বাচ্চুর উত্তর-”কুমার বিশ্বজিৎ চন্দনাকে নিয়ে গান গাইলেন আর আমি চন্দনাকে বিয়ে করে ফেললাম।” এই বয়ান প্রেমের প্রতি শুধু নিখাদ অনুরাগই নয়, বন্ধুত্বের প্রতিও কি অনবদ্য শ্রদ্ধাবোধ। আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনা, এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন-তিনি একজন বিস্ময়কর বাবা এবং যত্নশীল স্বামী।…যদি পরবর্তী জীবন থাকে, যেখানে আমি আমার স্বামী হিসাবে কাউকে বেছে নিতে পারি, আমি তাকে প্রতিবার পছন্দ করতাম।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিলবিলাসের মিয়া বাড়ির মেয়ে এই চন্দনা, আইয়ুব বাচ্চুর একমাত্র স্ত্রী। যদিও চন্দনার পরিবার প্রায় অর্ধ্বশতক আগেই ঢাকায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। চন্দনার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব মিয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লে. কর্ণেল ছিলেন। রব সাহেবরা তিন ভাই- আব্দুর রব, আব্দুল মোনায়েম ও আবু সালেক। বরিশালস্থ পটুয়াখালী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমাদের প্রিয় খাজা ভাই বিয়ে করেছেন আবু সালেকের কন্যাকে। তার কাছ থেকেই কিছু তথ্য পাওয়া। চন্দনাদের ঢাকায় বাসা ঢাকা কলেজের উল্টো দিকে পটুয়াখালীর আরেক কৃতি সন্তান প্রফেসর হাওলাদারের গলিতে। চন্দনারা তিন ভাই তিন বোন। ভাই শাকিল, শাহেদ ও বাবু। বোন মিতা, রিতা, চন্দনা। প্রেমটি চন্দনার পরিবার প্রথম দিকে মানেননি, কিন্তু পরিবর্তিতে বিয়েটি পারিবারিকভাবেই হয়েছিল।

আফসোস বাচ্চু ভাইকে কোনদিনও দুলাভাই ডাকা হলো না। ওপারে ভাল থাকবেন বাচ্চু ভাই। বাংলা রক মিউজিককে আপনি এমন উচ্চতায় নিয়েছেন- সংগীত প্রিয় বাঙালির হৃদয় কোঠরে আপনি অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে। লিজেন্ড অব গিটারিস্ট, স্টার- এ্যান স্টার মেকার, দ্যা গ্রেট এবি বিদায়-সাগরপারের মানুষদেরও ভালোবাসা জেনো।